কাল

ক্রিয়ার কাল

ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কেই ক্রিয়ার কাল বা কাল বলে।

যেমন- আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়ি।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি এখন সম্পন্ন হচ্ছে।

আবার, আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়বো।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি পরে সম্পন্ন হবে।

আবার, আমি ইডিবিডিপিডির সাইটে পড়েছি।– এখানে ‘পড়া’র কাজটি পূর্বেই সম্পাদিত হয়েছে।

উপরের বাক্য তিনটিতে ক্রিয়া তিনটি ভিন্ন সময়ে সম্পাদিত হয়েছে। ক্রিয়া সম্পাদনের এই সময়গুলোই ক্রিয়ার কাল বা কাল।

ক্রিয়ার কাল রূপ নির্ভর, অর্থ নির্ভর নয় : কাল মূলত ক্রিয়ার রূপকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ ক্রিয়াপদ তৈরি করে। ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ক্রিয়াবিভক্তিটি কাল ও পুরুষ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। আর তাই কাল ও পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়াপদের রূপও পরিবর্তিত হয়।

ক্রিয়াপদের এই পরিবর্তনশীল ‘রূপ’ কাল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, বাক্যের অর্থ নয়। মনে রাখতে হবে, কাল বলতে ক্রিয়ার কালকে বোঝায়, বাক্যের কাল নয়। তাই, ক্রিয়াপদ যে কালের রূপ অনুযায়ী ব্যবহৃত হবে, ক্রিয়াপদটি সেই কালের হবে।

যেমন- ‘তিনি গতকাল হাটে যাননি।’

এখানে, বাক্যটি গতকালকে সম্পাদিত ক্রিয়ার কথা বলছে। সুতরাং, এটি অতীত কালের উদাহরণ হওয়া উচিত। কিন্তু বাক্যের ক্রিয়াপদ ‘যাননি’ বর্তমান কালের রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। (যেমন- ‘আপনি আজ হাটে যাননি)। তাই, এখানে ক্রিয়াপদের বা বাক্যের কাল বা ক্রিয়ার কাল বর্তমান হিসেবে ধরা হয়। এ ধরনের উদাহরণকে কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয়।

কাল বা ক্রিয়ার কাল ইংরেজি Tense-এর অনুরূপ। কিন্তু ইংরেজি Tense বাক্যের অর্থ অনুসরণ করে, বাংলা কাল প্রায়ই বাক্যের অর্থ অনুসরণ করে না; মূলত বাংলা কাল ক্রিয়ার রূপকে অনুসরণ করে।

প্রকারভেদ

ক্রিয়ার কালকে মূলত- অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত, এই ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।

তবে এইগুলোকেও আবার অনেক ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১. অতীত কাল

অতীতে কোনো কাজ হয়ে গেছে- এমন বোঝালে তার কালকে অতীত কাল বলে।
যেমন- প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল।

২. বর্তমাল কাল

বর্তমানে কোনো কাজ হয় বা হচ্ছে- এমন বোঝালে তার কালকে বর্তমান কাল বলে।
যেমন- আমি লিখছি। তুমি পড়ছ।

৩. ভবিষ্যত কাল

ভবিষ্যতে কোন কাজ হবে- এমন বোঝালে তার কালকে অতীত কাল বলে।
যেমন – আমরা মাঠে খেলতে যাব। শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।

অতীত কাল

অতীতে কোনো কাজ হয়ে গেছে- এমন বোঝালে তার কালকে অতীত কাল বলে।
যেমন- প্রদীপ নিভে গেল। শিকারি পাখিটিকে গুলি করল।

প্রকারভেদ

অতীত কাল চার প্রকার। যথা- সাধারণ অতীত কাল, নিত্যবৃত্ত অতীত কাল, ঘটমান অতীত কাল ও পুরাঘটিত অতীত কাল।

১. সাধারণ অতীত কাল

যে ক্রিয়া আগেই শেষ হয়েছে তাকে সাধারণ অতীত কাল বলে। যেমন-

  • প্রদীপ নিভে গেল।
  • শিকারি পাখিটিকে গুলি করল।

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক) পুরাঘটিত বর্তমানের স্থলে : এক্ষণে জানিলাম, কুসুমে কীট আছে।

খ) বিশেষ ইচ্ছা প্রকাশে : তোমরা যা খুশি কর, আমি বিদায় হলাম।

২. নিত্যবৃত্ত অতীত কাল

অতীতকালে অভ্যস্ততা অর্থে

  • আমরা তখন রোজ নদীতে গোসল করতাম।

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক) কামনা প্রকাশে : আজ যদি সুমন আসত, কেমন মজা হত।

খ) অসম্ভব কল্পনায় : সাতাশ হত যদি একশ’ সাতাশ।

গ) সম্ভাবনা প্রকাশে : তুমি যদি যেতে, তবে ভালই হত।

৩. ঘটমান অতীত কাল

অতীতে চলছিল (যখনকার কথা বলা হচ্ছে, তখনো কাজটি শেষ হয় নি) এমন বোঝালে তাকে ঘটমান অতীত কাল বলা হয়। যেমন-

  • কাল সন্ধ্যায় বৃষ্টি পড়ছিল। আর আমরা তখন ভিজছিলাম।

৪. পুরাঘটিত অতীত কাল

অতীতে বহু আগে সংঘটিত হলে তাকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলে। যেমন-

  • সে বার তাকে সুস্থিই দেখেছিলাম।
  • কাজটি কি তুমি করেছিলে?

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক) অতীতের নিশ্চিত ঘটনার বর্ণনায় : পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে এক লক্ষ মারাঠা সৈন্য মারা গিয়েছিল।

আমি সমিতিতে সে দিন পাঁচ টাকা নগদ দিয়েছিলাম।

খ) অতীতের ক্রিয়া পরম্পরা বোঝাতে অপেক্ষাকৃত আগে সম্পন্ন ক্রিয়াতে : বৃষ্টি শেষ হবার পূর্বেই আমরা বাড়ি পৌছেছিলাম।

বর্তমাল কাল

বর্তমানে কোনো কাজ হয় বা হচ্ছে- এমন বোঝালে তার কালকে বর্তমান কাল বলে।
যেমন- আমি লিখছি। তুমি পড়ছ।

প্রকারভেদ

বর্তমান কাল চার প্রকার, যথা- সাধারণ বর্তমান কাল, নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল, ঘটমান বর্তমান কাল ও পুরাঘটিত বর্তমান কাল।

১. সাধারণ বর্তমান কাল

যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে তাকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। যেমন-

  • সে ভাত খায়।
  • আম বাড়ি যাই।

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক) অনুমতি প্রার্থণায় : এখন তবে আসি।

খ) উদ্ধৃতি : চণ্ডীদাস বলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

গ)বর্ণনা : আমি দেখেছি, বাচ্চাটি রোজ রাতে কাঁদে।

ঘ) নেতিবাচক শব্দযোগে অতীত কালের ক্রিয়ায় : তিনি গতকাল হাটে যাননি।

২. নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল

স্বাভাবিক বা অভ্যস্ততা বোঝালে তাকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন-

  • সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়।

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক) স্থায়ী সত্য : চার আর চারে আট হয়।

খ) ঐতিহাসিক বর্তমান : ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনায়; বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করলেন।

গ) কাব্যের ভনিতায় :

মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস ভনে শুনে পূণ্যবান।।

ঘ) অনিশ্চয়তা : কে জানে দেশে আবার সুদিন আসবে কি না।

ঙ) অতীত ও ভবিষ্যতে ‘যদি, যখন, যেন’ শব্দের প্রয়োগ করলে।

যদি ‍বৃষ্টি আসে, তবে আমরা বাড়ি চলে যাব।
সকলেই যেন সভায় হাজির থাকে।

বিপদ যখন আসে, তখন এমনি করেই আসে।

৩. ঘটমান বর্তমান কাল

অতীতে কোন কাজ শুরু হয়ে এখনও চলছে এমন বোঝালে তাকে ঘটমান বর্তমান কাল বলে। যেমন-

  • হাসান ইডিপিডিবিডিতে পড়ছে।
  • নীরা গান গাইছে।

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক) প্রত্যক্ষ উক্তিতে : বক্তা বললেন, ‘ধন-সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, দিকে দিকে আগুন জ্বলছে।’

খ) ভবিষ্যত সম্ভাবনা : চিন্তা করো না, কালই আসছি।

৪. পুরাঘটিত বর্তমান কাল

পূর্বেই শেষ হয়ে যাওয়া কোনো ক্রিয়ার ফল যদি এখনো বর্তমান থাকে তবে তাকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলে। যেমন-

  • এ বার আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
  • এতক্ষণ আমি অঙ্ক করেছি।

ভবিষ্যত কাল

ভবিষ্যতে কোন কাজ হবে- এমন বোঝালে তার কালকে অতীত কাল বলে। যেমন –

  • আমরা মাঠে খেলতে যাব।
  • শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।

প্রকারভেদ

১. সাধারণ ভবিষ্যত

পরে সংঘটিত হবে বোঝালে তাকে সাধারণ ভবিষ্যত কাল বলে। যেমন-

  • আমরা মাঠে খেলতে যাব।
  • শীঘ্রই বৃষ্টি আসবে।

বিশিষ্ট প্রয়োগ-

ক)আক্ষেপ প্রকাশে অতীতের স্থলে : কে জানত, আমার ভাগ্যে এমন হবে?

সে দিন কে জানত যে ইউরোপে আবার মহাযুদ্ধের ভেরী বাজবে?

খ) অতীতের ক্রিয়ায় সন্দেহের ভাব থাকলে : ভাবলাম, তিনি এখন বাড়ি দিয়ে থাকবেন।

তোমরা হয়ত বিশ্বনবী পড়ে থাকবে।

২. ঘটমান ভবিষ্যত

ভবিষ্যতে চলতে থাকবে বোঝালে তাকে ঘটমান ভবিষ্যত কাল বলে।

৩. পুরাঘটিত ভবিষ্যত

সম্ভবত ঘটে গেছে এমন ক্রিয়া বোঝাতে ভবিষ্যত কালের ক্রিয়া ব্যবহার করলে তা পুরাঘটিত ভবিষ্যত কাল হয়।