বাগধারা

বাগধারা

Part 1

বাক্যও বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাগধারা।বিশেষ প্রসঙ্গে শব্দের বিশিস্টার্থক প্রয়োগের ফলে বাংলায় বহু বাগধারা তৈরি হয়েছে।এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ আভিধানি অখ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের দ্যোতক হয়ে উঠে।যেমন :‘অন্ধকারে ঢিল ছোড়া’কথাটি দিয়ে বোঝানো হয়  আন্দাজে কিছু করা’।এর সংঙ্গে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার বাস্তব কোন সম্পর্ক নেই ।
যে পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফল অভিধানিক অর্থের বাইরে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে , তাকে বলা হয় বাগধারা।

বাগধারা সাহায্যে আমরা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করি।ভাবের ইঙ্গিত ময় প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তব্যকে রসমধুর করে উপস্হাপনের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে বাগধারায়।বাগধারার মাধ্যমে সমাজের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনার উদ্ভাসিত হয়।এদিক থেকে বাগধারা বাংলা সাহিত্যের বিশেষ সম্পদ।

বাগধারা গঠনে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে শব্দের রীতিসিদ্ধ প্রয়োগও করা হয়। একে বাগবিধি ও বলা হয়ে থাকে।

বাক্যে বাগধারা প্রয়োগের  উদাহরণ :

অকাল কুষ্মান্ড (অকেজো): অকাল কুম্মান্ড লোকটা গতকালও কাজটা শেষ করতে পরেনি ।
অকালপক্ব(ইঁচড়ে পাকা): এমন অকালপক্ব ছেলেকে যে শিক্ষকরা প্রশ্রয় দেবে না তাতে সন্দেহ নেই।
অকূল পাথার (মহাবিপদ): ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পেরে অনেক ছাত্র অকূল পাথারে পড়েছে।
অক্কা পাওয়া (মরে যাওয়া): যে কোন দিনই থুত্থুড়ে বুড়োটা অক্কা পেতে পারে।
অগাধ জলের মাছ (সুচতুর ব্যক্তি): মোড়ল সাহেব অগাধ জলের মাছ,তাঁকে বোঝা বড় কঠিন।
অগ্নিপরীক্ষা (কঠিন পরীক্ষা): ২০০৭ সালে বংলাদেশ ক্রিকেট দলের শ্রীলংকা সফর ছিল অগ্নিপরীক্ষা।
অগ্নিশর্মা (খুবই রাগান্বিত): লোকটাকে বেয়াববি দেখে বাবা রেগে অগ্নিশর্মা হলেন।
অদৃষ্টের পরিহাস (ভাগ্যবিড়ম্বনা): অদৃষ্টের পরিহাসে অনেক ধনকুবের পথের ফকির হয়ে গেল।
অনধিকার চর্চা(অজানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ): আমি ব্যবসায়ী মানুষ,সাহিত্যের আলোচনা আমার জন্যে অনধিকার চর্চা।
অনুরোধে ঢেঁকি গেলা(অনুরোধে কষ্ট স্বীকার): অনুরোধে অনেক ঢেঁকি গিলেছি,এথন আর পারছি না।
অন্ধের যষ্টি/নড়ি(অক্ষম লোকের একমাত্র অবলম্বন): একমাত্র নাতিটি বুড়ির অন্ধের যষ্টি।
অন্ধকার দেখা (বিপদে সমাধানের উপায় না দেখা): বাবার অকাল-মৃত্যুতে মেয়েটা চোখে অন্ধকার দেথতে লাগল।
অন্ধকারে ঢিল ছোড়া(আন্দাজে কিছু করা): অন্ধকারে ঢিল না ছুড়ে আসল ঘটনাটা জেনে এসো।
অমবস্যার চাঁদ(দুর্লভ ব্যক্তি বা বস্তু): আপনি দেখেছি অমবস্যার চাঁদ হয়ে উঠেছেন।আপনার দেখাই মিলছে না।

(২)

অরণ্যে রোদন(নিষ্ফল অনুনয়): লোকটা হাড়কৃপণ,ওর কাছে কিছু চাওয়া আর  অরণ্যে রোদন একই কথা।
অর্ধচন্দ্র (গলা ধাক্কা): দারোয়ান উটকো লোকটাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করে দিলেন।
আকাশকুসুম(অবাস্তব ভাবনা): শহরের সেরা কলেজে ভর্তি হওয়া অনেকের জন্য এখন আকাশকুসুম ব্যাপার।
আকাশ থেকে পড়া(স্তম্বিত হওয়া): পাপিয়ার কথা শুনে তাসলিমা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
আকাশ-পাতাল(সীমাহীন): শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রায় এখনও আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
আকাশ ভেঙে পড়া (মহাবিপদে পড়া): বন্যায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় অনেক পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
আকাশে তোলা(অতিরিক্ত প্রশংসা করা): কেউ কেউ স্বার্থ হাসিলের জন্য কমকর্তাদের আকাশে তোলে।
আকাশের চাঁদ(দুর্লভ বস্তু): সেরা কলেজে ভর্তি হতে পেরে ভাইয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন।
আক্কেল গুডুম(হতবুদ্ধি অবস্হা): ছেলেটার কথাবার্তা শুনে তো আমার আক্কেল গুডুম।
আক্কেল সেলামি(বোকামির দন্ড): ধাপ্পাবাজ লোকটার পাল্লায় পড়ে টাকাগুলো আক্কেল সেলামি দিতে হল।
আখের গোছানো(ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নেওয়া): দুর্নীতিবাজরা আখের গুছিয়ে নিলেও পার পাচ্ছে না।
আঙুল ফুলে কলা গাছ(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া): শেয়ারের ব্যবসায় কুদ্দুস সাহেব এখন আঙুল ফুলে কলা গাছ।
আট কপালে (হতভাগ্য): আট কপালে লোকের ক্ষেত্রে চাকরি জোটা মুশকিল।
আঠারো মাসে বছর(ঢিলেমি): আমার মতামা সব কাজে দেরি করেন।সবাই বলেন তার নাকি আঠার মাসে বছর।
আদাজল খেয়ে লাগা(উঠে পড়ে লাগা): পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য মাহমুদ আদাজল খেয়ে লেগেছে।
আদায় কাঁচকলায়(শত্রুভাবাপন্ন্): ওদের ভাইয়ে ভাইয়ে আদায় কাঁচকলায় সম্পক,কেউ কাউকে সাহায্য করে না।
আবোল–তাবোল(এলোমেলো কথা): আসল ঘটনাটা লুকুতে গিয়ে সে আবোল–তাবোল বকে চলছে।
আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অকেজো লোক): ও একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি,ওকে দিয়ে কাজটা হবে না।
আমলে আনা(গুরুত্ব দেওয়া): পুলিশ দারোআনের কোন কথাই আমলে আনল না।
আলালের ঘরের দুলাল(বড় লোকের আদুরে ছেলে): এই আলালের ঘরের দুলালটিকাজ দেখলে ভয় পায়।
আষাঢ়ে গল্প (বানানো কথা): সময়মত কাজে আসোনি, তার জন্য আষাঢ়ে গল্প বলার দরকার কি?
আসমান-জমিন ফারাক (বিপুল ব্যবধান): ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় আসমান –জমিন ফারাক।
আস্তানা গড়া(সাময়িকভাবে কোথাও থাকতে শুরু করা): বানভাসি লোকগুলো বাঁধের ওপর আস্তানা গেড়েছে।
আহলাদে আটখানা(আনন্দে আত্নহারা): মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে সে আহলাদে আটখানা।
ইঁচড়ে পাকা (অল্প বয়সে পেকে গেছে এমন): ওই ইঁচড়ে পাকা ছেলেটাকে পাত্তা দিলেই ঘাড়ে চেপে বসবে।

(৩)

ইতর বিশেষ (সামান্য পার্থক্য): ফলাফলে একই গ্রেড প্রাপ্তদের মধ্যে ইতর বিশেষ করা মুশকিল।
উড়ে এসে জুড়ে বসা(বিনা অধিকারে এসে সর্বেসর্বা হয়ে বসা): উনি উড়ে এসে জুড়ে বসে মাতব্বরি করবেন,তা পুরোনোরা মানবেন কেন?
উত্তম-মধ্যম (প্রচন্ড মার): ছিনতাইকারীকে উত্তম–মধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হল।
উভয় সংকট(দু দিকেই বিপদ): বিজ্ঞান না বাণিজ্য,কোনটা পড়ব এ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছি।
উলুবনে মুক্তো ছড়ানো(অপাত্রে মুল্যবান কিছু প্রদান): ওকে জ্ঞান দেওয়া আর উলোবনে মুক্তো ছড়ানো এখই কথা।
এঁটে উঠা(সমানে পাল্লা দিতে পারা): তোমার সঙ্গে এঁটে উঠা কঠিন।
এক কথার মানুষ(কথা রাথে এমন): আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন,আমি এক জকথার মানুষ।
একচোখা(পক্ষপাতদুষ্ট): একচোখা লোকের কাছে কখনো সুবিচার আশা করা যায় না।
এলাহি কান্ড(বিরাট আয়োজন): সওদাগর সাহেবের মেয়ের বিয়ে,এলাহি কান্ড তো হবেই।
একাই একশ(যথেষ্ট সমথ): ঐ পুঁচকো ছোঁড়াকে মোকাবেলার জন্য আমি একাই এক শ।
এসপার ওসপার(যে–কোনভাবে মীমাংশা): ঝামেলাটা আর সহজ হয় না।এবার এসপার ওসপার করতেই হবে।
ওত পাতা(সুযোগের অপেক্ষা থাকা): বিড়ালটা মাছ চুরি করার জন্য ওত পেতে রয়েছে।
কড়ায় গন্ডায় (সূক্ষ্ম হিসেব অনুযায়ী): ও তাঁর পাওনা কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিতে এসেছিল।
কথার কথা(হালকা কথা): আমি কথার কথায় একটি মন্তব্য করেছি আর তাতেই রাজু ক্ষেপে গেল।
কপাল ফেরা (সৌভাগ্য লাভ): ছেলেটা হঠৎ বিদেশে চাকরি পাওয়ায় চাচা- চাচির কপাল ফিরেছে।
কলুর বলদ(অন্যের জন্য একটানা খাটুনি): সংসারের হাল ধরতে ছোট মামা কলুর বলদের মত ঘানি টানছেন।
কাঁচা পয়সা(অল্প আয়াসে নগদ উপার্জন): দুর্নীতি করে অনেকে কাঁচা পয়াসা কামাই করছে।
কাঁঠালের আমসত্ব(অসম্ভব বস্তু): বাংলায় ১০০-তে ১০০ নম্বর পাওয়া কাঁঠালের আমসত্বের মতো।
কাছাঢিলা(অগোছালো স্বভাবের): যেমন কাছাঢিলা লোক তুমি,ছাতা তুমি হারাবে না তো কে হারাবে।
কাঠখড় পোড়ানো(নানারকম চেষ্টা ও পরিশ্রম): কাজটা হাসিলের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হল।
কাঠের পুতুল(নির্জীব, অসার লোক): কোন কোন মন্ত্রী হয়ে যান কাঠে পুতুল,সব কাজ চালান তাঁর সচিব।
কান খাড়া করা(মনোযোগী হওয়া): আদালতে কী রায় হয় তা শোনার জন্য আইনজীবিরা কান খাড়া করে রইল।
কান পাতলা(বিশ্বাসপ্রবণ): বড় সাহেব এমন কান পাতলা যে তার অধীন কাজ করাই মুশকিল।
কান ভারী করা(কারও বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি): তুমি নাকি আমার বিরূদ্ধে বড়কর্তার কান ভারী করেছ?
কুল কাঠের আগুন(তীব্র মন:কষ্ট): লাঞ্ছনা অপমানে তার মনের মধ্যে কুল কাঠের আগুন জ্বলতে লাগল।
কূপমন্ডূক(সংকীর্ণমনা লোক): আমাদের সমাজে কূপমন্ডূক লোকের অভাব নেই।
কেউকেটা (নিন্দার্থে গণ্যমান্য লোক): আপনি যে এমন কেউকেটা যে আপনার কথা শুনতেই হবে!

(৪)

কেঁচে গন্ডূষ করা(পুনরায় প্রথম থেকে শুরূ করা): পুরো হিসাবটাই ভুল হয়েছে।আবার কেঁচে গন্ডূষ করতে হবে।
কেঁচো খুঁড়তে সাপ(সামান্য ঘটনার সূত্রে গুরুতর ঘটনা প্রকাশ): জাল টাকা তদন্ত করতে গিয়ে বিরাট জালিয়াতি চক্র ধরা পড়ল–এ যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ!
কোমর বাঁধা(কাজে উঠে পড়ে লাগা): পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য তাহমিনা কোমর বেঁধে পড়াশুনায় লেগেছে।
খন্ড প্রলয়(তুমুল কান্ড): মোবাইল ফোন হারানোকে কেন্দ্র করে পাশের বাসায় একটি খন্ড প্রলয় ঘটে গেছে।
খয়ের খাঁ(খোশামোদকারী,চাটুকার): ক্ষমতাসীনদের চারপাশে খঁয়ের খাঁ লোকদের ভিড় জমে যায়।
খুঁটির জোর (পৃষ্ঠপোষকের সহায়তা): খুঁটির জোর আছে বলেই বারবার বদলি ঠেকায়।
গড্ডালিকা প্রবাহ(অন্ধের মতো অনুসরণ): বিত্তের মোহে সমাজের অনেক লোক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়।
গন্ডারের চামড়া(অপমান বা তিরস্কার গায়ে লাগায় না এমন): ওর বোধ হয় গন্ডারের চামড়া,তাই শত অপমানেও কোনো ভাবান্তর নেই।
গদাই লশকারি চাল(ঢিলিমি): এমন গদাই লশকরি চালে চললে কাজটা এ মাসে ও শেষ হবে না।
গলগ্রহ(দায় বা বোঝা): অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।
গাছে তুলে মই কাড়া(কাজে নামিয়ে সরে পড়া): তোমার ভরসায় এত বড় কাজে হাত দিয়েছি।এখন গাছে তুলে মই কেড়ে নিচ্ছ যে।
গায়ে পড়া(অযাচিত ঘনিষ্ঠতা): অমন গায়ে পড়া লোককে চেয়ারম্যান সাহেব পাত্তা দিবেন বলে মনে হয় না।
গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো(কোন দায়িত্ব গ্রহণ না করা): ও নেবে দায়িত্ব?গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানোই যে ওর স্বভাব।
গোঁয়ার গোবিন্দ(নির্বোধ ও একগুঁযে লোক): কাজটা বুঝে শুনে করবে।গোঁয়ার গোবিন্দের মতো করলে চলবে না।
গোড়ায় গলদ (মূল কিংবা শুরুতে ভুল): বিয়ের আয়োজনে গোড়ায় গলদ ছিল বলে এত বিশৃঙ্থলা।
গোবর গণেশ (বোকা,অকর্ণন্য লোক): ছেলেটার না আছে বুদ্ধি, না পারে কোন কাজ ও একেবারে গোবর গণেশ।
গোল্লায় যাওয়া(উচ্ছন্নে যাওয়া): বাবা  মায়ের আদরের ঠেলায় ছেলেটা গোল্লায় গেছে।
ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া(উদ্বেগ–উৎকন্ঠা খেকে স্বস্তি): ছেলেটা ঘরে ফিরে আসায় সবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
ঘাস কাটা(বাজে কাজে সময় নষ্ট করা): অণ্যেরা কাজ করবে আর তুমি বসে বসে ঘাস কাটবে ?তা হবে না।
ঘোড়া রোগ(উৎকট বাতিক): ভাত জোটে না,বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করতে চায় গরিবের ঘোড়ারোগ আর কি!