আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র লেখার নিয়ম কানুন

আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র ।

সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নানা প্রয়োজনে আমাদেরকে আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ বা সমাবেশের আয়োজন করতে হয়।বিয়ে,জন্মদিন বা দিবস উদযাপন,সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়া উপলক্ষে নির্ধারিত কর্মসূচির আলোকে যে পত্র লেখা হয় তাকে আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র বলে । সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই তা ছাপিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু –বান্ধব ও ঘনিষ্ঠ লোকজনের মাঝে বিলি করতে  হয় ।

আমন্ত্রণপত্র বা নিমন্ত্রণপত্র বিভিন্ন ধরনের হতে পারে । যেমন বিয়ে, জন্মদিন, কুলখানি, রবীন্দ্র – নজরুল  জয়ন্তী , স্বাধীনতা দিবস , একুশে ফেব্রুয়ারী ,বার্ষিক ক্রীড়া, পহেলা বৈশাখ, বর্ষবরণ, সাহিত্য সভা, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ,শিক্ষাসপ্তাহ, বইমেলা, শোকসভা, নাগরিক সংবর্ধনা,সুবর্ণজয়ন্তী, নাট্য-  উৎসব,লোক–উৎসব,সাংস্কৃতিক উৎসব ইত্যাদি নানা উপলক্ষে।

নিমন্ত্রণপত্র রচনায় বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য নিমন্ত্রণ প্রযোজ্য বলে সাধারণত এ ধরনের পত্রের শীর্ষে ধর্মীয় বা মঙ্গলসূচক কথা ব্যবহৃত হয় না।তবে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রের পত্রশীর্ষে কেউ কেউ মুসলমান রীতিতে ‘পরম করুণাময়ের নামে’ এবং হিন্দুরীতিতে ‘শ্রী শ্রী প্রজাপতয়ে নমঃ’লিখে থাকেন।পত্রশীর্ষে অনুষ্ঠানের শিরোনামও থাকতে পারে ।যেমন : ‘স্বাধীনতা দিবস’, ‘লোকমেলা ২০১২’ইত্যাদি।

নিমন্ত্রণপত্রের বিভিন্ন অংশ :

১. সম্ভাষণ:

নিমন্ত্রণপত্রে প্রাপককে সম্বোধন করার জন্য বিশেষ কিছু শব্দ ব্যবহৃত হয়।যেমন : সুধী, সৌম্য, জনাব, মহাশয়, মহোদর, মান্যবর, সুহৃদ,সুজন ইত্যাদি ।

২.মূল পত্রাংশ:

এ ধরনের পত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।নিমন্ত্রণপত্রের মূল বিষয়বস্তু নির্ভর করে অনুষ্ঠানের প্রকৃতির ওপর ।যে উপলক্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয় সে উপলক্ষ,স্থান, তারিখ সময় ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হয় ।প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে উদ্বোধক,প্রধান অতিথি,বিশেষ অতিথও আলোচকের নাম উল্লেখ থাকে ।বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে বর- কনের পরিচিতিও আজকাল উল্লেখ করা হয় ।এ ধরনের পত্রের ভাষা সহজ সরল সাবলীল ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। বক্তব্যের মধ্যে বিনম্রভাবও থাকা চাই ।

৩. ইতি বা সমাপ্ত :

এ ধরনের পত্রে একসময় ‘পত্র দ্বারা নিমন্ত্রণের জন্য ত্রুটি মার্জনীয়।’‘নিবেদক ইতি’-এসব লেখার প্রচলন ছিল।এখন ‘বিনয় আরজ’,‘নিবেদক ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে।

৪. নাম- স্বাক্ষরে সৌজন্য:

চিঠির বিষয় অনুসারে এ ধরনের পত্রে ‘বিনীত’‘বিনয়াবনত’, ‘শ্রদ্ধাবনত’,ভবদীয় ইত্যাদি ডানদিক থেকে লিখে তার নিচে আমন্ত্রণকারীর নাম লিখতে হয় ।কেউ কেউ সৌজন্য শব্দ ও স্বাক্ষর বামদিকেও লিখে থাকেন।

৫. ঠিকানাও তারিখ :

নিমন্ত্রণপত্রে বামদিকে তারিখ এবং ডানদিকে আমন্ত্রণকারীর নামের নিচে ঠিকানা লেখাই প্রচলিত নিয়ম।অধুনা সৌজন্য শব্দ,আমন্ত্রণকারীর নাম, ঠিকানা ও তারিখ বামদিকে লেখার প্রবণতাও লক্ষ করা যাচ্ছে।

৬. অনুষ্ঠানসূচি :

কোনো কোনো অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে আলাদাভাবে অনুষ্ঠানসুচী দেওয়ার প্রযোজন পড়ে।এর ফলে আমন্ত্রিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানের প্রকৃতি,ব্যাপ্তিকাল ইত্যাদি সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা করে নিতে পারেন।

৭. পত্র- প্রাপকের ঠিকানা:

এ ধরনরে পত্রে খামের ওপরে আলাদাভাবে পত্র-প্রাপকের  নাম- ঠিকানা লিখতে হয় ।নাম- ঠিকানা ভুল খাকলে তা প্রাপকের হাতে নাও পৌঁছতে পারে।

নিমন্ত্রণপত্রের বিভিন্ন অংশ

পত্রশীর্ষ বিজয় উৎসব ও লোকমেলা ২০১২
সম্ভাষণ সৌম্য,
মূল পত্রাংশ এ বছর মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪১ তম বর্ষপূতি হচ্ছে । গৌরবের এই হিরন্ময় লগ্নে আমরা শেকড়ের সন্ধানে সম্মিলিত হতে চাই।মূল্যায়ন করতে চাই আমাদের অর্জন ।নির্ধারণ করতে চাই উজ্জ্বলতর আগামীর লক্ষ্যে এগিয়ে চলার পথ ।এ উপলক্ষে আগামী ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে আযোজন করা হয়েছে দিনব্যাপি বিজয় উৎসব ও লোকমেলা।এ অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য গুণীজরা যোগ দেবেন।এ আয়োজনকে সার্থক করার জন্য আপনার সবান্ধব অংশগ্রহন প্রার্থনা করি।
নাম-স্বাক্ষরে সৌজন্য বিনীত-
নাম-স্বাক্ষর রাশেদুল হাসানআহবায়ক
ঠিকানা বিজয় উৎসব ও লোকমেলা পরিষদ ২০১২ঢাকা।
তারিখ: ৭-১২-২০১২
অনুষ্ঠানসূচি
১৬ই ডিম্বের ২০১২ রবিবারকিকেল ৪টা  :উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

উদ্বোধক  :বিশিষ্ট শিক্ষিাবিদ ড.আনিসুজ্জামান

প্রধান অতিথি :মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি

সন্ধ্যা ৭টা    :গণসংগীত ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের গান

রাত ৮টা    :দেশাত্ববোধক গান

রাত ৯টা    :মুক্তিযোদ্ধের নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়;।রচনা:

সৈয়দ সামসুল হক।পরিচালনা:আব্দুল্লাহ আল মামুন।