বাগধারা part 2

বাগধারা

বাক্যও বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাগধারা।বিশেষ প্রসঙ্গে শব্দের বিশিস্টার্থক প্রয়োগের ফলে বাংলায় বহু বাগধারা তৈরি হয়েছে।এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ আভিধানি অখ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের দ্যোতক হয়ে উঠে।যেমন :‘অন্ধকারে ঢিল ছোড়া’কথাটি দিয়ে বোঝানো হয়  আন্দাজে কিছু করা’।এর সংঙ্গে অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার বাস্তব কোন সম্পর্ক নেই ।
যে পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফল অভিধানিক অর্থের বাইরে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে , তাকে বলা হয় বাগধারা।

বাগধারা সাহায্যে আমরা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করি।ভাবের ইঙ্গিত ময় প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তব্যকে রসমধুর করে উপস্হাপনের অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে বাগধারায়।বাগধারার মাধ্যমে সমাজের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনার উদ্ভাসিত হয়।এদিক থেকে বাগধারা বাংলা সাহিত্যের বিশেষ সম্পদ।

বাগধারা গঠনে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে শব্দের রীতিসিদ্ধ প্রয়োগও করা হয়। একে বাগবিধি ও বলা হয়ে থাকে।

নাক গলানো(অনধিকার চর্চা): যে-কোন ব্যাপারে নাক গলানো কারো কারো স্বভাব।
নেই আাঁকড়া(নাছোড়বান্দা): কী যে নেই আাঁকড়া লোকের পাল্লায় পড়েছি!রেহাই মিলছে না।
পটল তোলা(মারা যাওয়া): চাঁদাবাজরা পটল তুলছে শুনে এলাকার লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
পথে বসা(সর্বস্বান্ত হওয়া): বন্যায় সব হারিয়ে অনেকে এবার পথে বসেছে।
পালের গোদা(দলের চাঁই,সর্দার): পুলিশ পালের গোঁদোকে কোর্টে চালান দিয়েছে।
পুকুর চুরি(বড় রকম চুরি): রাস্তা মেরামত না করেই ঠিকাদার ৫০ লাখ টাকা নিয়েছে, এ যে রীতিমতো পুকুর চুরি।
ফাঁক–ফোকর(দোষত্রুটি): আইনের ফাঁক-ফোকর গলে সন্ত্রাসীরা জামিনে খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
ফেঁপে উঠা(হঠাৎ বিত্তবান হওয়া): চোরাচালানি করে কেউ কেউ রাতারাতি ফেঁপে উঠেছে।
ফোঁড়ন কাটা(টিপ্পনী কাটা): কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কাটা ওর স্বভাব।
ফোপড়দালালি(নাক গলানো আচরণ): সব ব্যাপারে ওর ফোপড়দালালি করার অভ্যাস।
বকধার্মিক(ভন্ড): সমাজে বকধার্মিক লোকের অভাব নেই।
বর্ণচোরা আম(কপট লোক): লোকটা একটা বর্ণচোরা আম ।বাইরে থেকে ওকে বোঝা মুশকিল।
বাঁ হাতের ব্যাপার(ঘুষ দেওয়া-নেওয়া): এ অফিসে বাঁ হাতের ব্যাপার ছাড়া ফাইল নড়ে না।
বাজিয়ে দেখা(পরখ করা): সে ঘটনাটা জানে কিনা একটু বাজিয়ে দেখতে হবে।
বাপের বেটা(সাহসী): শাবাশ! বাপের বেটার মতই করছিস কাজটা।
বালির বাঁধ(ক্ষণস্হায়ী): বড়লোকের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর বালির বাঁধ একই কথা।
বিড়াল–তপস্বী(ভন্ড সাধু): সমাজে মাঝে মাঝে বিড়াল তপস্বীদের তৎপরতা বেড়ে যায়।
বিদ্যার জাহাজ(মূর্খ বা অশিক্ষিত লোক): যে নিজে বিদ্যার জাহাজ সে অন্যকে কী শেখাবে?
বুকের পাটা(সাহস): মাস্তানটার বিরুদ্ধে তুই অভিযোগ করছিস!তোর বুকের পাটা আছে বলতে হবে।
বুদ্ধির ঢ়েঁকি(নির্বোধ): এই কাজের জন্য চাই চালাক-চতুর লোক,বুদ্ধির ঢেঁকি দিয়ে একাজ হবে না।
ভিজে বেড়াল(বাইরে নীরিহ ভেতরে ধূত): ভিজে বেড়ালদের অনেক সময় চেনা যায় না।
ভরাডুবি(সর্বনাশ): আদমজি পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটচাষিদের এবার ভরাডুবি হয়েছে।
ভূতের বেগার(অযথা শ্রম দান): সরাক্ষণ ভুতের বেগার খাটছি, লাভ কিছুই হবে না।
মামাবাড়ির আবদার(চাইলেই পাওয়া যায় এমন): গতকাল ১০০ টাকা নিলে।আজ আবার ২০০ টাকা চাইছ।একি মামাবাড়ির আবদার নাকি?
মিছরির ছুরি(আপাতত মধুর হলেও শেষ পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক): তোমার কথাগুলো ঠিক যেন মিছরির ছুরি।
যক্ষের ধন(কৃপণের কড়ি): পৈতৃক ভিটেটা সে যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছে।
রুই–কাতলা(প্রভাবশালী): সমাজের রুই–কাতলাদের দাপটে চুনোপুঁটিদের আবস্হা এখন কাহিল।
লেফাফা দুরস্ত(বাইরের ঠাঁট ষোল আনা): ঘরে যে এমন টানাটানি,তা ওর লেফাফা ভাব দেখে কে বুঝবে?
রাশভারি(গম্ভীর): আমাদের প্রধান শিক্ষক রাশভারি লোক।সবাই ওকে ভয় পায়।
শাপে বর(অনিষ্টে ইস্ট লাভ): আমার বড়মামা চাকরি না পেয়ে ব্যবসায়ে ঢুকেছেন । এতে তাঁর শাপে বর হয়েছে।

(৭)

সেয়ানে সেয়ানে(দুই সমান প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে): দুজনের মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে অনেকদিন।
সোনায় সোহাগা(সার্থক মিল): পরীক্ষায় পাস করতে না–করতেই এমন ভালো চাকরি পাওয়া,এ যে সোনায সোহাগা!
হ-য-ব-র-ল(উল্টোপাল্টো): অনুষ্ঠানের হ-য-ব-র ল দেথে চলে এসেছি।
হাড়-হাভাতে(একেবারে নি:স্ব): হাড়-হাভাতে ছেলেটাযে কীভাবে এই সংসারে এসে জুটল বলতে পারবে না।
হাতটান(ছেটখাট চুরির অভ্যাস): ছেলেটা কাজে-কর্মে বেশ ওস্তাদ।তবে দোষের মধ্যে হাতটান আছে।
হাতের পাঁচ(শেষ সম্বল): হাতের পাঁচ হিসাবে হাজারখানেক টাকা আছে।তোমাকে ধার দেব কেমন করে?
হলে পানি পাওয়া(কাজ হাসিলের উপায় না পাওয়া): সে বড় কাজে হাত দিয়েছে,কিন্তু হালে পানি পাচ্ছে না।

অনুশীলনী

প্রয়োগমূলক নমুনা – প্রশ্ন

১. নিচের বাগধারাগুলোর প্রত্যেকটির অর্থ লেখ ও বাক্য রচনা কর :

ক) অমবস্যার চাঁদ আকাশের চাঁদ আকাশ কুসুম কাঁচা পয়সা ফাঁক–ফোকর
খ) অনুরোধে ঢেঁকি গেলা অন্ধকারে ঢিল ছোড়া ,আকাশে তোলা কাঠখড় পোড়ানো কান খাড়া করা
গ) অগাধ জলের মাছ এক চোখা কাঠরে পুতুল কেউকেটা বিড়াল-তপস্বী
ঘ) আক্কেল গুড়ুম ইঁচড়ে পাকা কান পাতলা খয়ের খাঁ দুমুখো সাপ
ঙ) আখের গোছানো আমলে আনা টনক নড়া পথে বসা বাজিয়ে দেখা

২. অর্থ ও পর্থক্য দেকিয়ে বাক্য রচনা কর :

ক) অন্ধকার দেখা অন্ধকারে ঢিল ছোড়া
খ) আকাশ-কুসুম আকাশ-পাতাল
গ) আক্কেল গুড়ুম আক্কেল সেলামি
ঘ) কান খাড়া করা কান ভারী করা
ঙ) গায়ে পড়া গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো

নৈর্ব্যক্তিক নমুনা –প্রশ্ন

সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন দাওঃ

১ ‘অকূল পাথার’ শব্দের প্রায়োগিক অথ কোনটি ?

ক.সীমাহীন সাগর

খ. মহাবিপদ

গ.বিশাল প্রস্তরখন্ড

ঘ. গোমেদ পাথর

(৮)

২ ‘অক্কা পাওয়া’ কথাটির অর্থ কি?

ক.আঘাত পাওয়া

খ. মরে যাওয়া

গ.কষ্ট পাওয়া

ঘ. দু:খ পাওয়া

৩.ভাগ্য বিড়ম্বনা বোঝাতে কোনটি ব্যবহৃত হয় ?

ক. কপাল পেরা

খ. ফেঁপে ওঠা

গ. অদৃষ্টের পরিহাস

ঘ. আঙুল ফুলে কলাগাছ

৪. ‘আকাশকুসুম’বলতে কী বোঝায়?

ক. অতিরিক্ত প্রশংসা

খ. অবাস্তব ভাবনা

গ. হতবুদ্ধি হওয়া

ঘ. বিস্তার ব্যবধান

৫. ‘বোকামির দন্ড’অর্থে কোন বাগধারাটি ব্যবহৃত হয়?

ক. আক্কেল সেলামি

খ. অর্ধচন্দ্র

গ. আক্কেল গুডুম

ঘ. তামার বিষ

৬. ‘খন্ড প্রলয়’প্রবাদটি কোন অর্থ প্রকাশ করে?

ক. মহা ঝড়-ঝাপটা

খ. তুমুল কান্ড

গ. ছোটখাটো কথা কাটাকাটি

গ. ভয়ংকর ঘটনা

৭.‘কুল কাঠের আগুন’ বাগধারাটির অর্থ কোনটি?

ক. তীব্র মন:কষ্ট

খ. অগ্নিশর্মা

গ. কাঠখড় পোড়ানো

ঘ. অগ্নিকান্ড

৮.‘একগুঁয়ে’ ভাবটি কোন প্রবাদে প্রকাশ পায়?

ক. উড়নচন্ডী

খ. গেঁফখেজুরে

গ. রাঘব বোয়াল

ঘ. গোঁয়ার গোবিন্দ

৯.‘গোল্লায় যাওয়া ’ বাগধারাটি কোন অর্থ বহন করে?

ক. উচ্ছনে যাওয়া

খ. ঘর ছাড়া

গ. চোরাবালি

ঘ. বালির বাঁধ

১০.কোন বাগধারাটি ‘তাসের ঘর’ বাগধারার সমার্থক?

ক.ঘরের ঢেঁকি

খ. ঘর ভাঙানো

গ. চোরাবালি

ঘ. বালির বাঁধ

(৯)

১১. ‘তামার বিষ’ কথাটির অর্থ কি ?

ক. অহংকার

খ. বিষদ্রব্য

গ. অর্থের কুপ্রভাব

ঘ. বিষাক্ত তামা

১২.‘দুধের মাছি’ বাগধারাটি কী অর্থ বহন করে ?

ক. চালবাজ

খ. সুসময়ের বন্ধু

গ. ভন্ড সাধু

ঘ. দুর্দিনের সাথী

১৩.‘বাইরের ঠাঁট বজায় রেথে চলে’ এমন ভাব বোঝাতে কোন বাগধারা প্রচলিত ?

ক. ব্যাঙের আধুলি

খ. ঠেঁটকাটা

গ. লেফাফা দুরস্ত

ঘ. ভিজে বেড়াল

১৪.‘অনিষ্টে ইষ্ট লাভ’ বোঝাতে কোন বগিধারাটি ব্যবহৃত হয় ?

ক. আহলাদে আটখানা

খ. তামার বিষ

গ. শাপে বর

ঘ. হিতে বিপরীত