সারমর্ম ও সারাংশ লিখন

সারমর্ম ও সারাংশ  লিখন

গদ্য ও পদ্য রচনায় কোনো না কোনো অন্তনির্হিত মূল ভাব থাকে।সহজ ও সাবলীল ভাষায় সংক্ষেপে তা লেখার নাম সারমর্ম বা সারাংশ।সাধারণত গদ্যের ভাব–সংক্ষেপণ বোঝাতে সারাংশ ও পদ্যের ভাব–সংক্ষেপন বোঝাতে সরমর্ম কথাটি ব্যবহৃত হয়।

সারমর্ম/ সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নির্দেশনা

সারমর্ম কিংবা সারাংশ লেখার দক্ষতা অর্জন করতে হলে নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়। চর্চা যতই বেশি হয় ততই শিক্ষার্থীর পক্ষে রচনার মূল ভাববস্তু উপলদ্ধির ক্ষমতা ও রচনা নৈপুণ্য বাড়ে। সারমর্ম/সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখা দরকার:

পঠন:

সারমর্ম বা সারাংশ লিখতে গেলে অনুচ্ছেদের তথ্য লিখলে চলে না,মূল ভাব বুঝে নিয়ে তাকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়।তাই প্রথমে মুল ভাব বোঝার জন্য রচনাটি ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়া দরকার।

মূল ভাব সন্ধান ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ চিহ্নিতকরণ:

পদত্ত রচনাংশে সাধারণত একটি মূল ভাব বা বক্তব্য থাকে।কখনো কখনো একাধিক মূল ভাব বা বক্তব্যও থাকতে পারে।তা উপলব্ধি করতে পারলে সারমর্ম ও সারাংশ লেখা সহজ হয়।মূল ভাব খুঁজে নেওয়ার একটা সহজ উপায় হল,যেসব বাক্য বা বাকাংশ মূল ভাবের দ্যোতক বলে মনে হয় সেগুলো চিহ্নিত করা।

বাহুল্য বর্জন:

অপ্রয়োজনীয় অংশ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ আলাদা করার মাধ্যমে সহজ মুল ভাব বের করা হয়।এজন্য মূল রচনাংশে ব্যবহৃত উদ্ধৃতি,বর্ণনা,সংলাপ,উহদারণ,অলংকার(উপমা–রূপক)ইত্যাদি বাদ  দিতে হয়।

ভিন্নতর প্রসঙ্গের অবতারণা না করা :

সারমর্ম কিংবা সারাংশ অবশ্যই মূল রচনার ভাবধারণার মধ্যে সীমিত থাকে।তাই মূল ভাবের মধ্যে বাইরে অন্য কোন ব্যক্তিগত মতামত বা মন্তব্য সারমর্ম/সারাংশে প্রকাশ করা চলে না।

 সারমর্ম / সারাংশ রচনার কৌশল :

ক. অনুচ্ছেদ :

সারমর্ম বা সারাংশ একটি অনুচ্ছেদে লেখা উচিত।

খ.প্রারম্ভিক বাক্য:

প্রারম্ভিক বাক্য যথাযথ সংযত বা আকর্ষণীয় হওয়া চাই।এতে পাঠক বা পরীক্ষক শুরুতেই চমৎকৃত হন।

গ.প্রসঙ্গ বাক্য :

প্রসঙ্গ বাক্য(মূল ভাবটুকু প্রকাশের চুম্বক বাক্য)সারমর্ম বা সারাংশ প্রথমে থাকলে ভালো।তা প্রয়োজনে মধ্যে কিংবা শেষে ও থাকতে পারে।

ঘ. প্রত্যক্ষ উক্তি:

মূলে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে তা পরোক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হয়।

ঙ.পুরুষ:

সারমর্ম বা সারাংশে উত্তম পুরুষে(আমি,আমরা)বা মধ্যম পুরুষে(তুমি,তোমরা)লেখা চলে না।

চ.উদ্ধৃতি:

মূলে কোন উদ্ধৃতাংশ থাকলে সারমর্মে উদ্ধৃতিচিহ্ন বর্জিত হবে এবং সংক্ষিপ্ত ও সংহতরুপে তা প্রকাশ করতে হবে।

ছ.ভাষা:

সারমর্ম ও সারাংশে ভাষা সরল ও সাবলীল হওয়া দরকার।তাই জটিল বাক্যের পরিবর্তে সরল বাক্য এবং দূরুহ শব্দের পরিবর্তে সহজ-সরল শব্দ ব্যবহার করা উচিত।

জ.হুবহু উদ্ধৃতি বা অনুকৃতি:

মূ্লের কোন অংশে হুবহু উদ্বৃতি বা অনুকৃতি সারমম বা সারার্শে গ্রহণীয় নয়।মুলত কোন অংশকে সামান্য ।দল-বদল করে লিখে দেওয়া ও উচিত।

ঝ.পরিসর :

সারমর্ম বা সারাংশ কত বড় বা ছোট হবে তা নির্ভর করে প্রদত্ত অংশে বর্ণিত বিষয়ের গুরুত্ব ও গভীরতার উপর।প্রদত্ত রচনার ভাববস্তু সুসংহত ও নিরেট ভাবে প্রকাশিত হলে তা সংক্ষেপ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।ফলে সারমর্ম বা সারাংশ মূলের সমান,অর্ধে,এক তৃতীয়াংশ বা তার কম হতে পারে।

ঞ.খসড়া:

সারমর্ম বা সারাংশ লেখার জন্য প্রথমে প্রদত্ত রচনার মূল ভাবটুকুর আলোকে একটি প্রাথমিক খসড়া দাঁড় করানো ভালো । তারপর প্রয়োজনমত পরিমার্জনা করে পুনর্লিখন করতে হয় ।